নবী ইবরাহিম (আ.) – এক সত্যিকারের ঈমানদারের গল্প
নবী ইবরাহিম (আ.) – এক সত্যিকারের ঈমানদারের গল্প
নবী ইবরাহিম (আ.) ছিলেন এক মহান নবী, যাঁকে "খলিলুল্লাহ" (আল্লাহর বন্ধু) উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। তাঁর জীবন ছিল ত্যাগ, পরীক্ষা, ও ঈমানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি একাধারে বিজ্ঞান, যুক্তি, ও নির্ভীকতার প্রতীক। তিনি মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, অত্যাচারী শাসক নমরুদকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, এবং অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েও আল্লাহর অনুগ্রহে রক্ষা পেয়েছেন।
🔹 শৈশব থেকেই সত্যের সন্ধান
নবী ইবরাহিম (আ.) এমন এক সমাজে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে লোকেরা মূর্তি পূজা করত। তাঁর বাবা আজার ছিলেন মূর্তি নির্মাতা। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ইবরাহিম (আ.) বুঝতে পেরেছিলেন যে পাথরের মূর্তি কখনো সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না।
একদিন তিনি তাঁর বাবাকে বললেন,
"হে আমার পিতা! আপনি এমন জিনিসের পূজা করেন কেন, যা শোনে না, দেখে না, কোনো উপকার করতে পারে না?"
কিন্তু তাঁর বাবা ও জাতি তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি। বরং, তাঁরা তাঁকে হুমকি দিল।
🔹 মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে লড়াই
একদিন, ইবরাহিম (আ.) এক চমকপ্রদ পরিকল্পনা করলেন। লোকেরা যখন মন্দির ছেড়ে উৎসবে মেতে উঠেছিল, তখন তিনি চুপিচুপি মন্দিরে ঢুকে পড়লেন।
🔥 তিনি সব ছোট ছোট মূর্তি ভেঙে ফেললেন!
🔨 শুধু সবচেয়ে বড় মূর্তিটিকে রেখে দিলেন এবং তার গলায় কুড়াল ঝুলিয়ে দিলেন।
যখন লোকেরা ফিরে এসে এই অবস্থা দেখল, তারা ক্ষুব্ধ হয়ে চিৎকার করে বলল,
"কে আমাদের দেবতাদের এভাবে ধ্বংস করল?"
কেউ একজন বলল,
"ইবরাহিম নামে এক যুবক আছে, সে মূর্তি পূজা পছন্দ করে না। নিশ্চয়ই সে-ই এটি করেছে!"
তারা ইবরাহিম (আ.)-কে ধরে আনল এবং জিজ্ঞাসা করল,
"হে ইবরাহিম! এটা কি তুমি করেছ?"
তিনি বুদ্ধিদীপ্তভাবে উত্তর দিলেন,
"আমি নয়, এটা করেছে তোমাদের সবচেয়ে বড় মূর্তিটি! যদি সে কথা বলতে পারে, তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করো!"
লোকেরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল! তারা বুঝতে পারল যে, তাদের উপাস্যরা একটুও শক্তিশালী নয়! কিন্তু তাদের অহংকার এতটাই প্রবল ছিল যে, সত্য মেনে না নিয়ে বরং তারা ইবরাহিম (আ.)-কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল।
🔹 নমরুদের চ্যালেঞ্জ ও অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ
রাজা নমরুদ ছিলেন অত্যন্ত গর্বিত ও অত্যাচারী শাসক। তিনি নিজেকে ঈশ্বর বলে দাবি করতেন। ইবরাহিম (আ.) যখন তাঁকে বললেন,
"আমার প্রভু হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, যিনি জীবন দেন ও মৃত্যু ঘটান,"
নমরুদ বলল,
"আমি জীবন দিতেও পারি, মৃত্যুও ঘটাতে পারি!"
তৎক্ষণাৎ তিনি এক বন্দীকে হত্যা করলেন এবং আরেক বন্দীকে ছেড়ে দিলেন, এটা প্রমাণ করার জন্য যে, তিনিও জীবন-মৃত্যুর মালিক!
তখন ইবরাহিম (আ.) বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বললেন,
"আমার প্রভু সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি পারলে পশ্চিম দিক থেকে উঠাও!"
নমরুদ কোনো উত্তর দিতে পারল না! সে অপমানিত হয়ে ইবরাহিম (আ.)-কে অগ্নিতে নিক্ষেপের নির্দেশ দিল।
🔥 এক বিশাল আগুন জ্বালানো হলো!
🔥 ইবরাহিম (আ.)-কে তাতে ফেলে দেওয়া হলো!
কিন্তু আল্লাহ আদেশ দিলেন,
"হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও!"
আগুন ইবরাহিম (আ.)-এর গায়ে কোনো ক্ষতি করতে পারল না! তিনি নিরাপদে বেরিয়ে এলেন, যা পুরো জাতির জন্য এক বিরাট বিস্ময় ছিল!
🔹 শিক্ষা: ঈমানের শক্তি অপরাজেয়!
✅ সত্যের পথে থাকলে আল্লাহর সাহায্য আসে।
✅ মূর্তি কখনোই সৃষ্টিকর্তা হতে পারে না।
✅ অহংকারী রাজাদের পতন অবধারিত।
✅ পরীক্ষা ও বিপদে ধৈর্য ধরলেই আল্লাহর সাহায্য আসে।
🔹 উপসংহার
নবী ইবরাহিম (আ.)-এর গল্প আমাদের অন্ধবিশ্বাস, অহংকার, ও মূর্তিপূজা থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দেয়। তিনি সত্য ও ন্যায়বিচারের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর মতো ঈমানদার হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন! 🤲
আপনার মতামত দিন!
এই গল্প থেকে আপনি কী শিক্ষা পেলেন? কমেন্টে জানান! 😊



Comments (0)
No comments yet. Be the first to comment!